প্রাথমিক শিক্ষায় ধারাবাহিক মূল্যায়নে সমাজ সম্পৃক্ততা
মোছাঃ শামীমা জাহান শারমিন
ইন্সট্রাক্টর, থানা রিসোর্স সেন্টার, টঙ্গী, গাজীপুর।
আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তারাই দেশ গড়ার কারিগর। প্রত্যেক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ শুরু করে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সরকার নিরলস কাজ করছে। বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে রঙ্গিন বই হাতে তুলে দেয়া, ৪+ ও ৫+ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম, উপবৃত্তি কার্যক্রম, স্টুডেন্টস কাউন্সিল, ক্ষুদ্রে ডাক্তার, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উন্নত প্রশিক্ষণ, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট, কাবিং কার্যক্রম, ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে শ্রেণি পাঠদান, বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন শিক্ষাক্রম(২০২১), প্লেয়িং কর্ণার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সুষ্ঠুপরিচালনা ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবার সাথে সমাজের স্টেকহোল্ডার তথা সমাজের সম্পৃক্ততা তথা অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
আমাদের সকলের কাজ হল স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং সেই সাথে এসএমসি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। অসচেতন অভিভাবকদের এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বিভিন্ন জাতীয় দিবস, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বনভোজন, শিখনফল অগ্রগতির প্রতিবেদন ফলাফল মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রী (বই, খাতা, কলম, পেন্সিল, স্কেল, জ্যামিতি বক্স ইত্যাদি) বিতরণ করার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
শিক্ষাক্ষেত্রে মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার দ্বারা শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নতির পরিমান নির্ধারণ সম্ভব। ২০২১ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিক মূল্যায়ন ১ম শ্রেণিতে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধকে মূল্যায়ন করা হয়। শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা, সূক্ষ্মচিন্তা, যোগাযোগ ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে উঠে। শিখন মূল্যায়ন করে দূর্বলতা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ফলাবর্তন ও পুনঃমূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি নিশ্চিত করা হয়। আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন নয় বলে শিক্ষার্থীদের ভীতি কাজ করে না। ধারাবাহিক মূল্যায়নে ব্যক্তিগত ও সামাজিকতা থাকে, তাই শিক্ষাথীদের বিভিন্ন গুণাবলির বিকাশ সাধন হয়।
অনেক অভিভাবকদের মনে ভ্রান্ত ধারণা যে বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হয় না। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষেই বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হয়, বিধায় শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক মূল্যায়নের প্রয়োজন নাই। কিন্তু আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন আরও উৎকৃষ্ঠ এবং সকল শিক্ষার্থীদের শিখন নিশ্চিত ও স্থায়ী করার আধুনিক ও যুগোপযোগি পন্থা তা অভিভাবকরা বুঝতে না পারার কারণে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন বা মাদ্রাসায় তাদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পাশাপাশি সমাজের সকল শ্রেণির জনগণকে এই ধারাবাহিক মূল্যায়নের সুবিধাসমূহ ঐ অসচেতন অভিভাবকদের ভ্রান্ত ধারণা দুর করার কাজে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আমরা মা সমাবেশ, উঠোন বৈঠক এর মতো সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কার্যাবলীর মাধ্যমে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করে ধারাবহিক মূল্যায়ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির করতে পারলেই প্রাথমিক শিক্ষায় ধারাবাহিক মূল্যায়নের কাঙ্খিত সাফল্য দৃশ্যমান হবে।